ইন্টারনেট
হোম / সারা বাংলা / বিস্তারিত
ADS

উত্তাল হয়ে উঠেছে পদ্মা, হরিরামপুরে ভাঙন আতঙ্ক

24 June 2024, 6:01:40

বর্ষার জোয়ারের পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উত্তাল হয়ে উঠেছে পদ্মা নদী। তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের দুর্গম চরাঞ্চলসহ নদী তীরবর্তী এলাকায়। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে চরাঞ্চলসহ পদ্মা পাড়ের কয়েক হাজার মানুষের। পদ্মার বড় বড় ঢেউয়ের তোড়ে নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে নদীভাঙন রোধে ফেলা জিও ব্যাগ।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, প্রায় পঞ্চাশের দশকে পদ্মার অব্যাহত ভাঙনের শিকার হয়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে হরিরামপুর উপজেলার আজিমনগর, সুতালড়ী ও লেছড়াগঞ্জ তিনটি ইউনিয়ন। সত্তরের দশকের শেষের দিকে নতুন চর জেগে উঠলে তিনটি ইউনিয়নে আবার জনবসতি শুরু হয়।

বর্তমানে চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নে প্রায় ৫০ হাজারেরও অধিক মানুষ ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে বসবাস করছে।

২০২২ সালের দিকে তীব্র ভাঙন শুরু হলে জরুরি ভিত্তিতে চরাঞ্চলে নদী শাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০২২/২৩ অর্থ বছরে ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে আজিম নগরে ৪০০ মিটার এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়। চলতি বর্ষা মৌসুমে পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে প্রবল স্রোত আর ঢেউয়ের আঘাতে আজিম নগরের হাতিঘাটা এলাকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। জিও ব্যাগ ধসে নদীর তীরের মাটি বের হয়ে আসছে। ফলে নদী ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে এ এলাকার শতশত পরিবার।

উপজেলার মালুচী গ্রামের বাসিন্দা নোয়াব আলী বলেন, কুশিয়ারচর পশ্চিমপাড়া পর্যন্ত জিও ব্যাগ পড়েছে। আর শিবালয়ের শেষ সীমানা মালুচী ঘাটের পশ্চিমে জিও ব্যাগ পড়েছে। মাঝের এই জায়গাটুকুতে এখনও জিও ব্যাগ পড়েনি। গত কয়েকদিন জোয়ারের পানি আসতে শুরু করায় এই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। এখানে পানির গভীরতাও বেশি। তাই এখনই ভাঙনরোধ করা না হলে বড় ধরনের ভাঙন দেখা দিতে পারে।

কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী বনি ইসলাম রূপক বলেন, কুশিয়ারচর বিল্লাল মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত জিও ব্যাগ পড়লেও তারপর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় এখনো কোনো জিও ব্যাগ পড়েনি। ফলে জোয়ারের পানিতে ওই এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়াও কোটকান্দি এলাকায়ও নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে জিও ব্যাগ। ধসে পড়ছে মাটি। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় ধরনের ভাঙন দিতে পারে।

আজিমনগর ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বিকালে নদীর পাড়ে বেড়াতে গিয়ে ভাঙন কবলিত জায়গা নজরে পড়ে। দুই বছর আগে যে জিও ব্যাগগুলো ফেলা হয়েছিল, প্রবল স্রোত আর ঢেউয়ের আঘাতে সেই জিওব্যাগ ধসে মাটি বের হয়ে আসছে। প্রায় ৮ মিটার এরিয়া ভেঙে ভেতরে ঢুকে গেছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ভয়াবহ ভাঙনে রূপ নিতে পারে।

একই গ্রামের নাসির উদ্দীন বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে প্রবল স্রোত আর ঢেউয়ের আঘাতে আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে ৷ জিও ব্যাগ ধসে যাচ্ছে। এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে চরাঞ্চলের ফসলি জমিসহ ঘরবাড়ি ঝুঁকিতে পড়বে।

মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দীন বলেন, হরিরামপুরের বেশিরভাগ এলাকায় জিওব্যাগ ফেলে নদী শাসনের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে কিছুদিন পূর্বে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে তীব্র ঢেউয়ের কারণে পদ্মার তীরে কিছু কিছু জায়গায় জিওব্যাগ স্লাইড করে। সম্প্রতি উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে জেলার যমুনা ও পদ্মা নদীর পাড়ে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে যতদ্রুত সময়ের মধ্যে সম্ভব জিওব্যাগ ডাম্পিং কাজ শুরু করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে পদ্মা নদী পৃথিবীর দ্বিতীয় খরস্রোতা নদী। বন্যাকালীন সময়ে এখানে বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিতে পারে। আমরা সতর্ক আছি, যাতে এলাকাগুলো রক্ষা করতে পারি।

হরিরামপুর উপজেলার ভাঙনকবলিত স্থানগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন বলেও জানান তিনি।

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: