মার্চে স্কুল-কলেজ খোলার সম্ভাবনা ক্রমেই কমছে

18 March 2021, 10:19:49

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি আবার খারাপের দিকে যাওয়ায় সরকারঘোষিত তারিখে স্কুল-কলেজ খোলা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। গত দু-তিন দিনে করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুর হার আরো বেড়েছে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুপারিশ এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, আগামী ৩০ মার্চ স্কুল-কলেজ খোলার সম্ভাবনা ক্রমেই আরো ক্ষীণ হয়ে আসছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ১২ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী ছুটি ছিল আগামীকাল রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে স্কুল-কলেজ খোলা হবে কি না এবং সেই পরিবেশ-পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে কি না, তা পর্যালোচনা করার জন্য আজ শনিবার আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক ডাকা হয়। সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত হয় এই বৈঠক। সেখানেই মূলত এই সিদ্ধান্ত হয়।

এছাড়া স্কুল-কলেজের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধই রাখতে হবে। অন্যান্য কার্যক্রমও সীমিত রাখতে হবে। যেকোনো পাবলিক পরীক্ষাও (বিসিএস, এসএসসি, এইচএসসি, মাদরাসা, দাখিলসহ অন্যান্য) বন্ধ রাখতে হবে।

কিন্তু সব শেষ (১৭ মার্চ) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২১ উপলক্ষে গতকাল বুধবার আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না, যা অত্যন্ত কষ্টের। ছোট্ট সোনামণিদের এটাই বলতে চাই—তোমরা তোমাদের জীবনটাকে সুন্দর করো, পড়াশোনা শেখো। করোনার প্রাদুর্ভাব কেটে যাবে এবং আমরা তখনই স্কুল খুলে দেব।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ৩০ মার্চ আর বিশ্ববিদ্যালয় ২৪ মে খোলার কথা। হলগুলো খোলার কথা রয়েছে ১৭ মে। তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মচারী, অভিভাবকসহ সবার স্বাস্থ্যঝুঁকি, সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

কভিডসংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির পরামর্শ ছিল, করোনার নমুনা শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার চিন্তা করা। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আন্ত মন্ত্রণালয় সভা শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে নমুনা শনাক্তের হার ছিল ৩.৩০ শতাংশ, তবে কয়েক দিন ধরেই বাড়ছে করোনা সংক্রমণের হার। কয়েক দিন ধরে এই হার ঘুরেফিরে ৯ শতাংশের কাছাকাছি থাকছে। ফলে স্কুল-কলেজ খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা আরো বেড়েছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও করোনাভাইরাসে সংক্রমিতদের শনাক্ত করার হার এভাবেই ধীর গতিতে বাড়ছে।

সে হিসেবে বাংলাদেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা পিক বা সর্বোচ্চ শিখরে যেতে আরও ৪২ দিন থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে আশঙ্কা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, করোনা সংক্রমণের হার এভাবে বাড়তে থাকলে স্কুল-কলেজ খোলার সম্ভাবনা কম। আর সংক্রমণের হার খুব বেশি না বাড়লে শুধু এসএসসি-এইচএসসির পরীক্ষার্থীদের জন্য সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারে। আবার সামনে রমজান মাস। তাই করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলেও ঈদের পর অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গেই ২৪ মে থেকে স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

আগামী ৩০ মার্চ থেকে স্কুল-কলেজ না খোলার আহ্বান জানিয়েছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম। সংগঠনটি গত সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘দেশে করোনা সংক্রমণ ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এ অবস্থায় ঘোষিত তারিখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করছে। তাই আমরা জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।’

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে যে ১২টি সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো হলো-

১। সম্ভব হলে সম্পূর্ণ লকডাউনে যেতে হবে। না হলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সমন্বয় রেখে যেকোনো জনসমাগম বন্ধ করার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

২। কাঁচাবাজার, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, শপিংমল, মসজিদ, রাজনৈতিক সমাগম, ভোট অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিল, রমজান মাসের ইফতার মাহফিল ইত্যাদি অনুষ্ঠান সীমিত করতে হবে।

৩। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, সেগুলো বন্ধ রাখতে হবে। অন্যান্য কার্যক্রমও সীমিত করতে হবে।

৪। যেকোনো পাবলিক পরীক্ষা (বিসিএস, এসএসসি, এইচএসসি, মাদ্রাসা, দাখিলসহ) নেওয়া বন্ধ রাখতে হবে।

৫। কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের আইসোলেশন করার পদক্ষেপ নিতে হবে।

৬. যারা রোগীদের সংস্পর্শে আসবে তাদর কঠোর কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

৭। বিদেশ থেকে বা প্রবাসী যারা আসবেন তাদের ১৪ দিনের কঠোর কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে সামরিক বাহিনীর সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।

৮। আগামী ঈদের ছুটি কমিয়ে আনা যেতে পারে।

৯। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে আইন আরও জোরালোভাবে কার্যকর করতে হবে।

১০। পোর্ট অব এন্ট্রিতে জনবল আরও বাড়াতে হবে এবং নজরদারির কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।

১১। সব ধরনের সভা ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে করার উদ্যোগ নিতে হবে।

১২। পর্যটন এলাকায় চলাচল সীমিত করতে হবে।

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।