সিনহা হত্যার এক বছর আজ

31 July 2021, 10:45:05

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার এক বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন তিনি।

হত্যাকাণ্ডের পাঁচদিন পর ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে দ্বিতীয় ও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতকে তৃতীয় আসামি করে আরও আটজনকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি তদন্ত করার আদেশ দেন র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‍্যাব)।

হত্যাকাণ্ডের পর চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে, ৮৩ জনকে সাক্ষী করে আলোচিত মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা র‍্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম।

এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় গত ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই বাদীপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু কঠোর লকডাউনের কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণে থেমে আছে বিচারকাজ।

গতবছর ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরে এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ।

সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়ার পর রাশেদ ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য গত প্রায় একমাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় ছিলেন। ওই কাজে তার সঙ্গে ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ।

কক্সবাজারের পুলিশ সে সময় বলেছিল, সিনহা তার পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে ‘পিস্তল বের করলে’ চেক পোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে। পুলিশ সেদিন ঘটনাস্থল থেকেই সিফাতকে গ্রেপ্তার করে। পরে নীলিমা রিসোর্ট থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শিপ্রাকে।

সিনহা নিহতের ঘটনায় এবং গাড়ি থেকে মাদক উদ্ধারের অভিযোগে টেকনাফ থানায় দুটি মামলা করে পুলিশ, যাতে সিনহা এবং তার সঙ্গে থাকা সিফাতকে আসামি করা হয়।

আর নীলিমা রিসোর্ট থেকে শিপ্রাকে গ্রেপ্তার করার সময় মাদক পাওয়া যায় অভিযোগ করে তার বিরুদ্ধে রামু থানায় মামলা করা হয়। কিন্তু পুলিশের দেওয়া ঘটনার বিবরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতবছর ২ আগস্ট উচ্চ পর্যায়ের এই তদন্ত কমিটি গঠন করে। পুলিশের বিরুদ্ধে ‘বিচার বহির্ভূত হত্যার’ অভিযোগগুলোও নতুন করে আলোচনায় আসতে শুরু থাকে।

সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস ৫ অগাস্ট ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকতসহ নয় জন পুলিশ সদস্যকে আসামি করে আদালতে মামলা করলে র‌্যাবকে তদন্তভার দেন বিচারক।

তাদের মধ্যে সাতজন পরদিন কক্সবাজারের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। সিনহা হত্যার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন জন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টের দায়িত্বরত আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলায় গ্রেপ্তার ১৪ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। তাদের মধ্যে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল ছাড়া ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওই ১৪ জনের বাইরে টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই সাগর দেবকে অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকতসহ গ্রেপ্তার পুলিশ সদস্যদের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনার পর কক্সবাজারের পুলিশকে নতুন করে সাজানো হয়। এসপি থেকে কনস্টেবল- প্রায় সব পুলিশ সদস্যকে বদলি করা হয় অন্য জেলায়।

সিনহার সঙ্গী সিফাত ও শিপ্রার বিরুদ্ধে পুলিশ মাদক আইনে যে দুটি মামলা করেছিল, অভিযোগের ‘সত্যতা পাওয়া যায়নি’ জানিয়ে সেসব মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৫ আসামি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তারা হলেন, বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, কনস্টবল রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টবল সাগর দেব, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।