অধরা রয়ে গেল বাংলাওয়াশ

7 August 2021, 9:33:33

শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের দেখা পেল অস্ট্রেলিয়া। কম রানের পুঁজি নিয়েও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দারুণ লড়াই করেছে টাইগাররা। ১০৫ রানের টার্গেটে অস্ট্রেলিয়াকে বেঁধে ফেলতে চেষ্টার পুরোটা দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের প্রান্তরে পৌঁছে যায় অজিরা। জয় পেতে অজিরা খেলেছে ১৯ ওভার পর্যন্ত।

প্রমবারের মতো ক্রিকেটের অন্যতম মোড়ল অস্ট্রেলিয়ার সাথে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জিতেছে বাংলার দামাল ছেলেরা। প্রথম তিন ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সাথে বড় জয়ের পর চতুর্থ ম্যাচে জয়ের মাধ্যমে বাংলাওয়াশ মিশনে আরেকধাপ এগিয়ে থাকতেই আজ মাঠে নামে ডমিঙ্গো শিষ্যরা। মিরপুর শের-এ বাংলা স্টেডিয়ামে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ব্যাটিংয়ে নেমেই বিপদে পড়েছে টাইগাররা। অস্ট্রেলিয়ার স্পিনারদের কাছে একেবারে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটাররা।

সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচের মতোই এ ম্যাচেও সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচে ব্যর্থ হলেও সৌম্য সরকার আর নাঈম শেখের উপরেই আস্থা রাখে বাংলাদেশ। আগের তিন ম্যাচে ২, ০, ২ রান করে আউট হলেও চতুর্থ ম্যাচে সুযোগ পান সৌম্য। এ ম্যাচেও ব্যর্থ তিনি। আউট হন ১০ বলে ৮ রান করে। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে অজি পেসার জশ হেইজেলউডকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বৃত্তের মধ্যে অ্যালেক্স কেরির হাতে ধরা পড়ে সাজঘরে ফেরেন সৌম্য।

এদিকে, সৌম্যর ব্যর্থতার দিনে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে নাঈমকেও। তার ব্যাটেও রান আসছে না দীর্ঘদিন। উইকেটে মানিয়ে নেওয়ার প্রাথমিক চ্যালেঞ্জে অবশ্য উতরে গেছেন নাঈম। বলের মান বিবেচনা করে ব্যাট করছেন বটে, তবে সুযোগ নিচ্ছেন না একেবারেই। তার ধীরগতির ব্যাটিং দলের চাপ বাড়ছে আরও। আগে তিন ম্যাচে দলের চাহিদা মতো রানের চাকা সচল রাখলেও এ ম্যাচে সুবিধা করতে পারেননি সাকিব। ২৬ বল খেলে মাত্র ১৫ রান করে হেইজেলউডের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি। সাকিবের বিদায়ের পরেই মাঠে আসেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। আগের দিনের ম্যাচ উইনার এদিন যেন একেবারে সুবিধা করে উঠতে পারেননি। রানের খাতা খোলার আগেই ফিরেছেন সাজঘরে। মিচেল সুয়েপসানের বলে এলবিডাব্লিউ’র ফাঁদে পড়েন তিনি। অধিনায়কের বিদায়ের পরের বলেই সেই সুয়েপসানের বলেই গোল্ডেন ডাক মেরে ডাগ আউটে ফেরেন দলের উইকেটকিপার ব্যাটার নুরুল হাসান সোহান।

এরপরে আফিফ আর নাইম মিলে কিছুটা ভিত ধরলেও অস্ট্রেলিয়ার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে তা পূরণ হয়নি। ম্যাচের ১৫ তম ওভারে সেই সুয়েপসানের আরেক শিকার হোন নাইম শেখ। ৩৫ বলে ২৮ রান করে সুয়েপসানের গুগলিকে উঠিয়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন নাইম। নাইমের ক্যাচ তালুবন্দি করতে ভুল করেন নি অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক।

নাইমের বিদায়ের পর আফিফকে সঙ্গ দিতে মাঠে আসেন সদ্য জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত হওয়া শামীম হোসেন পাটোয়ারি। ১৬ তম ওভারে অ্যাস্টন অ্যাগারের প্রথম বলে বিশাল এক ছক্কা মেরে আবারও ম্যাচের নায়ক হওয়ার আভাস দিচ্ছিলেন আফিফ। কিন্তু এক বল পরেই আবারও ডিপ লেগ অঞ্চল দিয়ে অ্যাস্টন অ্যাগারকে বাউন্ডারি মারতে গিয়ে ক্যাচ আউট হয়ে ফিরেন তিনি। আফিফ যখন সাজঘরের পথে তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৫ ওভার ৪ বলে ৬ উইকেটের বিনিম্যে মাত্র ৭৮ রান।

পুরো সিরিজ জুড়ে দারুণ খেলা বাংলাদেশের চতুর্থ ম্যাচে দলীয় শতরান সংগ্রহে যখন সন্দেহ, তখন মাঠে দলের হাল ধরেন দুই তরুণ শামীম এবং শেখ মেহেদি। কিন্তু জিম্বাবুয়ের সাথে দারুণ সিরিজ কাটিয়ে আসা শামীম যেন অস্ট্রেলিয়া সিরিজে একবারে নিষ্প্রভ সময় পার করছেন। ১৮ তম ওভারে এন্ড্রু টাইয়ের বলে ক্যাচ তুলে ৩ রান করে আউট হোন তিনি। এরপর মাঠে নামেন নাসুম আহমেদ।

১৯ তম ওভার পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৯০ রান। শেষে নাসুমকে সাথে নিয়ে শেষ ওভারে মেহেদির ১ ছক্কা আর ১ চারে শতরানের মাইলফলক পার করে বাংলাদেশ। পরে এন্ড্রু টাইয়ের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন মেহেদি। মেহেদির পরের বলেই শরিফুল এসে ক্যাচ আউট হলে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২০ ওভারে ৯ উইকেটের বিনিময়ে ১০৪ রান। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিনটি করে উইকেট পান এন্ড্রু টাই এবং মিচেল সুইপসান। এছাড়া দুইটি উইকেট পান জশ হ্যাজলউড।

দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম ওভারেই অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েডকে সাজ ঘরে ফেরান মেহেদি। তবে তারপরেই ঘুরে দাঁড়ায় তারা। সাকিবের এক ওভারে পাঁচ ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরে দেন অজি ব্যাটার ড্যানিয়েল ক্রিস্টান। পরে নাসুমের বলে এলবি ডাব্লিউয়ের ফাঁদে পরে আউট হোন বেন ম্যাকডারমট। পর পরেই শুরু হয় অজিদের উইকেটে আসা যাওয়া। মুস্তাফিজের বলে আবারও ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফিরেন ড্যানিয়েল ক্রিস্টান। পাঁচ ছক্কা খেয়ে নিজের পরের ওভারে মিচেল মার্শের স্ট্রেইট ড্রাইভটা সোজা গিয়েছিল নন-স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প বরাবর। তবে তার আগে আঙুল লাগআন সাকিব । ক্রিজের বাইরে থাকা মোয়েজেস হেনরিকেসকে ফিরতে হয় রান-আউট হয়ে।

এদিকে এদিন দারুণ ছন্দে থাকা মুস্তাফিজের সিমের ওপর হাত ঘুরিয়ে করা স্লোয়ার ঠেকাতে পারেননি অ্যালেক্স ক্যারি। গাজী সোহেলের দেওয়া এলবিডব্লুর সিদ্ধান্ত রিভিউ করেও লাভ হয়নি ক্যারির। ৪৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর ৬৩ রানে ৫ম উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া!

আগের ওভারে মিচেল মার্শের একটা কট-বিহাইন্ড হয়েছিল কি-না, আল্ট্রা-এজের পর সেটি নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। তবে সেসব বিতর্কের অপেক্ষা করলেন না মেহেদী। মার্শকে করলেন বোল্ড। অফস্টাম্পে ফুললেংথে পড়া বলটা ঢুকে গেছে মার্শের রক্ষণ ভেদ করে। শেষ ১৮ রানে অস্ট্রেলিয়া হারিয়েছে ৫ উইকেট, নিশ্চিতভাবেই আরও বেশী চাপে পরে গেছে তারা।

তবে দলীয় ৯৯ রানে অ্যাস্টন অ্যাগার ফিরলেও জয় পেতে বেগ পেতে হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেট হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় তারা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ- ১০৪/৯ (ওভার: ২০)
নাইম ২৮ (৩৬), আফিফ ২১ (১৭)

অস্ট্রেলিয়া- ১০৫/৭ (১৯)

বাংলাদেশের একাদশ:
সৌম্য সরকার, নাঈম শেখ, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ(অধিনায়ক), নুরুল হাসান সোহান, আফিফ হোসেন, শামীম হোসেন পাটোয়ারি, শেখ মেহেদি হাসান, নাসুম আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান এবং শরিফুল ইসলাম।

অস্ট্রেলিয়ার একাদশ:
ম্যাথু ওয়েড (অধিনায়ক), আলেক্স ক্যারি, বেন ম্যাকডারমট, ড্যান ক্রিশ্চিয়ান, মিচেল মার্শ, মোয়েসেস হেনরিকস, অ্যাস্টন টার্নার, অ্যাস্টন অ্যাগার, মিচেল সুইপসন, অ্যান্ড্রু টাই, জশ হ্যাজলউড।

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।