সচলের প্রস্তুতি গণপরিবহনে

10 August 2021, 9:53:21

মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ রোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ শেষ হচ্ছে আজ মঙ্গলবার রাত ১২টায়। আগামীকাল থেকে চলবে সবধরনের গণপরিবহন। এজন্য বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচলের প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা পরিবহনগুলো চালুর আগে ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে নিচ্ছেন শ্রমিকরা। এছাড়া যান্ত্রিক ত্রুটিসহ বিভিন্ন সমস্যারও সমাধান করছেন তারা।

মঙ্গলবার রাজধানীর বাস টার্মিনাল, কমলাপুর রেল স্টেশন ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে এই চিত্র।

দীর্ঘদিন ধরে সড়কে না নামার কারণে গাড়ির বিভিন্ন ত্রুটি তৈরি হতে পারে। তাই সড়কে নামার আগের দিন সবকিছু ঠিকঠাক করে নিতে ব্যস্ত পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। এতদিন গণপরিবহন থেকে বেশ দূরে থাকা পরিবহন শ্রমিকরা ফিরেছেন গাড়ি মালিকদের কাছে। বুঝে নিয়েছেন গাড়ির দায়িত্ব। ইঞ্জিন মিস্ত্রি থেকে শুরু করে সব কৌশলীর এখন ব্যস্ততা চরমে।

কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে গুলিস্তান রুটে চলাচল করে রজনীগন্ধা পরিবহন। বিধিনিষেধ চলাকালে সড়কে চাকা ঘোরেনি পরিবহন কোম্পানির কোনো বাসের। সড়কের পাশে ও গ্যারেজে পরে থেকে গাড়িতে জমেছে ধুলো-ময়লা। এখন চলছে সবকিছু পরিষ্কারের তোড়জোড়।

রজনীগন্ধা পরিবহনের চালক বাবুল হোসেন ঢাকা টাইমসকে জানান, ঢাকার সড়কে যাত্রী পরিবহনের কাজে ১৬৬টি গাড়ি চলে এই প্রতিষ্ঠানটির। লকডাউনে কোনো গাড়ির চাকাই ঘোরেনি। শুধু চালকরা কেউ কেউ দুই-চারদিন পরপর এসে সব গাড়ির ইঞ্জিন কিছু সময়ের জন্য চালু করেছিলেন। এতে করে গাড়ির ইঞ্জিন অকেজো হয়নি। কিন্তু গাড়ির নড়াচড়া না করার কারণে জমেছে ধুলো ময়লা।

বাবুল বলেন, ‘পুরা গাড়ি ভরা ময়লা, ধুলা। এখন সব পরিষ্কার করি। আল্লাহ দিলে কাইল রাস্তায় নামুম।’

রজনীগন্ধার মতো করে মোহাম্মদপুর-গুলিস্তান রুটের সিটি বাস; সাভার-নিউমার্কেট-সাইনবোর্ড রুটের নীলাচল, লাব্বাইক, এম এম লাভলী; মোহাম্মদপুর-মিরপুর রুটের প্রজাপতি পরিবহন, পরিস্থান; মোহাম্মদপুর-উত্তরা রুটের তেতুলিয়া, ভুঁইয়া পরিবহন; উত্তরা-গুলিস্থান রুটের এয়ারপোর্ট বঙ্গবন্ধু পরিবহনসহ বেশ কিছু রুটের বাসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসকল পরিবহনে কাজ করা সকল শ্রমিকই এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ওয়েলকাম পরিবহনের চালক মো. রাশেদ বলেন, ‘অনেকদিন গাড়ি পরে থেকে নোংরা হয়ে গেছে তাই পরিষ্কার করছি। গাড়ির ইঞ্জিন, চাকা, ব্রেক সবকিছু ঠিক আছে নাকি তা চেক করছি। মালিকরা আমাগো কইছে গাড়ি ধুয়ে মুছে চেক করে প্রস্তুত রাখতে। অনেকদিন পর গাড়ি চালামু মনডার মধ্যে ভালোই লাগছে।‘

পরিবহন মিস্ত্রীরা দেখে নিচ্ছেন গাড়ির ইঞ্জিন, গিয়ার, ব্যাটারি, চাকা সব ঠিক আছে কি না।

এদিকে সকাল থেকে শুরু হচ্ছে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল। এক্ষেত্রে অলস পরে থাকা টিকেট কাউন্টার, ঝিমিয়ে পড়া টার্মিনাল এখন সরব হয়ে উঠেছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সবকিছু গুছিয়ে নেওয়া থেকে শুরু করে সকাল থেকে সড়কে বাসের চাকা ঘোরাতে প্রস্ততি নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট সবাই।

ব্যস্ততা সদরঘাটে

আগামীকাল থেকে পুরো দমে চালু হচ্ছে লঞ্চ চলাচল। দেশের দক্ষিণবঙ্গের যাত্রী চলাচলের জন্য অন্যতম মাধ্যম লঞ্চ। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সকাল থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চলাচল শুরু হচ্ছে।

লঞ্চ চলাচলের আগে ঘাটে বাধা লঞ্চগুলোকে ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে নিচ্ছেন নৌযান শ্রমিকরা। দেখে নেয়া হচ্ছে লঞ্চের হ্যাচকভার, ইঞ্চিন, রাডারসহ সবকিছু।

এবিষয়ে লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘কাল থেকে সব স্বাস্থ্যবিধি মেন লঞ্চ চলাচল শুরু হচ্ছে। প্রতিদিন যাত্রা শুরু ও শেষে লঞ্চ পরিষ্কার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে মালিকদের।’

প্রস্তুত হচ্ছে ট্রেনও

কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে অনেক দিন ছেড়ে যায়নি ট্রেন। ঈদের পর কিছু ট্রেন চলাচল করলেও সে সংখ্যাটা ছিল খুবই কম। দেশের নানান রুটে চলাচলকারী অধিকাংশ ট্রেনই ছিল বসা। দীর্ঘদিন পর বগি নিয়ে জেলায় জেলায় ছোটার অপেক্ষায় আছে ট্রেনগুলো। আগামীকাল সকাল থেকে ট্রেন চলাচলের আগে পরিষ্কার করা হচ্ছে ট্রেনের বগিগুলো। নিরুত্তাপ ইঞ্জিনকেও দেখে নেওয়া হচ্ছে ভালোভাবে। কোনো ত্রুটি থাকলে তা সারিয়ে নিচ্ছেন প্রকৌশলীরা।

কমলাপুর রেলস্টেশনে ট্রেনের যাবতীয় অংশ সারিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি পুরো স্টেশন ও ট্রেনে জীবাণুনাশক করে নিতে কাজ করছে টার্মিনাল সংশ্লিষ্টরা।

মহামারির বিস্তার রোধে দেশে গত ৫ এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ চলছে। মাঝে ঈদুল আজহা ঘিরে আট দিনের বিরতি শেষে ২৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া কঠোর বিধিনিষেধ ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছিল। পরে তা ১০ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ১১ আগস্ট থেকে সবকিছু শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে গণপরিবহন চলাচলের বিষয়ে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়। আগে আসনসংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলার অনুমতি দেওয়া হতো। কিন্তু এবারের আদেশে বলা হয়েছে, সড়ক, রেল ও নৌপথে আসনসংখ্যার সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন বা যানবাহন চলাচল করতে পারবে। সড়কপথে গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিদিন মোট পরিবহনসংখ্যার অর্ধেক চালু করতে পারবে। একই সঙ্গে গণপরিবহনে কোনোভাবেই আসন সংখ্যার চেয়ে বেশি যাত্রী বহন করা যাবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। পূর্ণ আসনে যাত্রী নেওয়ার অনুমতি দেওয়ায় প্রত্যাহার করা হয়েছে ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়াও।

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।