সব শিক্ষক-কর্মচারীকে টিকা দেওয়ার পরই খোলা হবে স্কুল-কলেজ

12 August 2021, 12:53:47

ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে চলছে বিভিন্ন পর্যায়ে চিন্তা-ভাবনা। এ ছাড়া করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে একই সময়ে এবারের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সরাসরি ক্লাস শুরুর ব্যাপারটিও ভাবনায় থাকছে। তবে মধ্য নভেম্বরে ছোট পরিসরে এসএসসি এবং ডিসেম্বরের শুরুতে এইচএসসি পরীক্ষা শেষে পুরোদমে স্কুল-কলেজও খুলে দেওয়ার বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সব শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে দ্রুত টিকা দেওয়ার পরই বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে। অন্যদিকে সব শিক্ষক-কর্মচারীকে টিকার আওতায় আনার পরই খোলা হবে স্কুল-কলেজ। ফলে সব কিছুই নির্ভর করছে টিকাপ্রাপ্তি, টিকা দেওয়া এবং করোনা পরিস্থিতির উন্নতির ওপর।

এদিকে গতকাল বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আমরা সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে চাই এবং নভেম্বর-ডিসেম্বরে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সচিব ড. ফেরদৌস জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিশেষ করে গণটিকা কর্মসূচি শুরুর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে টিকা নিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০ শতাংশ শিক্ষকই টিকা নিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া রেজিস্ট্রেশন করা প্রায় দুই লাখ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই প্রথম ডোজ নিয়েছেন। এক-দেড় মাসের মধ্যে প্রায় সব শিক্ষার্থীরই দুই ডোজ টিকা নেওয়া শেষ হবে। আর এর মধ্যে করোনা সংক্রমণও কমে আসতে পারে। আমরা আশা করছি, সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে পারব। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।’

সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় গেল বছরের শেষদিককার করোনা পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে সব কিছুর পরিকল্পনা করছে। কারণ ওই সময়ে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। তবে গেল বছরের চেয়ে এবার অনেক বেশি মানুষ টিকা নিয়েছে। এ ছাড়া যেভাবে টিকা আসছে তাতে আগামী দু-তিন মাসে আরো অনেক মানুষেরই টিকা নেওয়া শেষ হবে। ফলে এবার নভেম্বর-ডিসেম্বরে গত বছরের চেয়ে একটু বেশি সংক্রমণ থাকলেও পুরোদমে স্কুল-কলেজ খুলে দিতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর করোনা সংক্রমণের হার বেশি থাকলেও সব শিক্ষক-শিক্ষার্থীর টিকা নেওয়া থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে বাধা থাকবে না।

kalerkantho

গত শনিবার শিক্ষা সাংবাদিকদের এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছিলেন, সরকারি পর্যায়ের প্রায় সব শিক্ষকই টিকা নিয়েছেন। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিন লাখ ৬৩ হাজার ২২২ শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে টিকা নিয়েছেন দুই লাখ ৭৮ হাজার ৪২৬ জন। বাকি আছেন প্রায় ৮৪ হাজার শিক্ষক। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪ হাজারের বেশি শিক্ষক টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন, তাঁদের মধ্যে টিকা নিয়েছেন ৩০ হাজারেরও বেশি। আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই সব শিক্ষকই টিকা নিয়ে নেবেন আশা করা হচ্ছে।

তিনি আরো জানিয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক লাখ ৭৯ হাজার ২৬১ শিক্ষার্থী টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন ৭৯ হাজার ৯১৪ জন। দুই ডোজ পেয়েছেন ছয় হাজার ৭২ জন।

ইউজিসি সূত্র জানায়, সব শেষ প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছেন। গণটিকা শুরু হওয়ার পর গেল কয়েক দিন ব্যাপকসংখ্যক শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছেন।

ওই একই অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেছেন, ‘১৭ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছি আমরা। করোনার এখন যে সংক্রমণ চলছে সেটা কমে এলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা স্কুলগুলো খুলে দিতে চাই। সরাসরি ক্লাস শুরু করা খুব দরকার। স্কুল খুলে দেওয়ার পূর্ণ প্রস্তুতি আমাদের আছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তদারকিতে প্রাথমিকের বেশির ভাগ শিক্ষকই টিকা নিয়েছেন।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকার চাইছে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে জট লেগে থাকা স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলো শেষ করতে। একই সঙ্গে আটকে থাকা স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শেষ করারও চিন্তা রয়েছে সরকারের। এরপর ধাপে ধাপে কলেজ ও স্কুল খুলে দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া দুই দিন পর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচ্ছন্ন করতে প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে ডেঙ্গু বিস্তার ঠেকানোর সহায়তার পাশাপাশি করোনা-পরবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতিও হয়ে যাচ্ছে।

ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ‘সরকার এখন শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই তৎপর। শিক্ষার্থীরাও টিকা নিচ্ছেন। আমরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার পর্যায়ে রয়েছি। আমার বিশ্বাস, আগামী দু-এক মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যবস্থা হবে।’

করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গেল বছরের ১৭ মার্চ থেকে তালা পড়ে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দরজায়। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ। সম্প্রতি ইউনেসকো-ইউনিসেফ এক যৌথ বিবৃতিতে টিকা দেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করেই স্কুল খুলে দিতে বলেছে। তবে দেশে ১৯ দিনের টানা ‘লকডাউন’ শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পর্যটনকেন্দ্র ছাড়া গতকাল বুধবার থেকে সব কিছুই খুলছে।

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।