ফ্রোজেন ফুড স্বাস্থ্যকর নাকি অস্বাস্থ্যকর?

21 August 2021, 6:13:10

কর্মব্যস্ততায় বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনের অনেক কিছুই বিশেষ করে খাদ্যাভ্যাস। বিশেষ করে করোনাকালে মানুষের খাদ্যাভ্যাসে ফ্রোজেন ফুডের খাদ্যের চাহিদা বেড়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে নাশতা কিংবা খাবার তৈরির ঝামেলা থেকে বাঁচতে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে ফ্রোজেন খাবার। ফ্রিজ থেকে প্যাকেট বের করে ঝটপট পকোড়া ভেজে ফেলা বা ‘ফ্রোজেন’ মাছ বা মাংস চটজলদি রেঁধে ফেলার সুবিধার কারণেই দ্রুত চাহিদা বেড়েছে এই সব প্যাকেটজাত ‘ফ্রোজেন ফুড’-এর। সসেজ, সালামি, নাগেটস, ফিশ ফিলে কিংবা প্রি-কাট মাছ বা মাংস খান সবই এখন পাওয়া যায়।

অনেকের আবার ধারণা দীর্ঘ দিন ফ্রোজেন ফুড খেলে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে কঠিন রোগবালাই। পুষ্টিবিদরা কী বলছেন, জেনে নেওয়া যাক—

টাটকা সবজির মতো বা তার থেকেও বেশি স্বাস্থ্যকর হয় ফ্রোজেন সবজি। কারণ এই সব সবজি ফলনের সেরা সময় তুলে ফ্রিজ করা হয়।

প্যাকেজড দুধ এমন ভাবে প্রসেস করা হয় যাতে বেশি দিন ফ্রেশ থাকে। এই সব দুধ স্কিমড, টোনড ও অনেক সময়ই টাটকা দুধের থেকে বেশি হাইজিনিক হয়।

বাড়িতে তৈরি ইয়োগার্টের থেকে প্যাকেজড ইয়োগার্ট বেশি স্বাস্থ্যকর। কারণ এতে মিনারেল ও প্রোবায়োটিক বেশি থাকে। ফ্লেভারড না কিনে প্লেন ইয়োগার্ট কিনুন।

যে কোনও ফার্মেন্টড ফুডে স্বাস্থ্যকর ব্যাকেটেরিয়া থাকে। যা শরীরের জন্য খুবই উপকারি। আচার, কিমচির মতো ফার্মেন্টেড খাবার অনেক দিন ফ্রিজে রেখে দিলেও ভালো থাকে।

পুষ্টিবিদদের মতে, খাবার কীভাবে প্রিজার্ভ করা হচ্ছে, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সংস্থাই প্রিজারভেটিভ বা অ্যাডিটিভস ব্যবহার করে না। আবার প্রিজাররভেশনের সময়ে পুষ্টিগুণ কিছুমাত্রায় নষ্ট হয়ে গেলে তা সংযোজনও করা হয়। সে দিক দিয়ে দেখলে ফ্রোজেন ফুড কিন্তু খারাপ নয়। তাজা আনাজপাতির সঙ্গে তুলনা করলে ফ্রোজেন ফুড পিছিয়ে থাকবে। কিন্তু ধরুন আপনার স্থানীয় বাজারে বেরি পাওয়া যায় না। সেখানে ফ্রোজেন বেরি খেলে তার স্বাদ, পুষ্টি তো পাবেন। তা হলে সে ক্ষেত্রে ফ্রোজেন ফুড খাওয়া যেতেই পারে।

তবে ভিটামিন কিছু ক্ষেত্রে যে সংরক্ষণ পদ্ধতিতে নষ্ট হয়। সংরক্ষণ করার আগে কড়াইশুঁটি বা কিছু আনাজ ব্লাঞ্চ করা হয়। তাপমাত্রায় কিছুটা ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। তাই খাওয়ার আগে একটু পাতিলেবুর রস দিয়ে ব্যালান্স করে নিতে পারেন।

পুষ্টিবিদরা বলেন, যে ভাবে তা প্রিজার্ভ করা হয়, তাতে এর মধ্যে ব্যাকটেরিয়ার গ্রোথ হতে পারে না। তবে ফ্রোজেন ফুড কিনে বাড়িতেও সংরক্ষণ করতে হবে ডিপফ্রিজে। তাপমাত্রা যেন সেখানে শূন্যের নিচে থাকে। বরফ জমার তাপমাত্রায় রাখতে হবে ফ্রোজ়েন ফুড। এত ঠান্ডায় ব্যাকটেরিয়ার বাড়বৃদ্ধি হয় না। ফলে যে আনাজ এমনিতে হয়তো দুই-তিন দিন ভাল থাকত, ফ্রোজেন ফুডের ক্ষেত্রে সেটিই সপ্তাহখানেক ভাল থাকে। তাই এই খাবার খেলেই যে শরীর খারাপ করবে বা ফুড পয়জিনিং হবে, তা কিন্তু নয়। বরং ঠিক মতো সংরক্ষণ করতে পারলে ফ্রোজেন ফুডে ক্ষতি নেই।

পুষ্টিবিদদের মতে, শূন্য ডিগ্রির নিচে স্টোর করা হয় খাবার, তাই পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করে খেলে যেমন খাবারের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়, ঠিক তেমনই এত নিম্ন তাপমাত্রায় তা স্টোর করলেও খাবারের পুষ্টিগুণ কিছুটা নষ্ট হয়ে যায়। যেমন ভিটামিন সি ও ডি-র ঘাটতি দেখা যায় ফ্রোজেন ফুডে। কিছু ফ্রোজেন ফুডে সোডিয়াম একটু বেশি মাত্রায় ব্যবহার করা হয়। মুখে দিলে নোনতা স্বাদ পাওয়া যায়। তাই কার্ডিয়াক ও কিডনির রোগীদের ফ্রোজেন ফুড না দেওয়াই ভাল।

নিয়ম মানতে হবে

ফ্রোজেন ফুড কেনা থেকে শুরু করে রান্না করার ক্ষেত্রেও কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। এ ধরনের খাবার কেনার আগে অবশ্যই লেবেল দেখতে হবে। এক্সপায়ারি ডেট পার হয়ে গেলে তা কেনা চলবে না বা খাওয়া চলবে না।

আইসক্রিম খাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকেই লেবেল দেখেন না। কিন্তু প্যাকেটের গায়ে এক্সপায়ারি ডেট লেখা থাকে। বিশেষত উৎসবে হুটহাট অনেকেই আইসক্রিম কিনে খেতে শুরু করে দেন। ভিড়ের মধ্যে হয়তো দেখা সম্ভবও হয় না। কিন্তু সেখানেই ভুল হয়। যেহেতু দুধ দিয়েই মূলত আইসক্রিম তৈরি হয় আর দুধ পচনশীল তাই আইসক্রিমের এক্সপায়ারি ডেট দেখে কিনুন।

ফ্রোজেন ফুড রান্না করার আগে যেটুকু লাগবে, ঠিক সেটুকুই বার করুন। পুরো প্যাকেট ঘরের তাপমাত্রায় এনে অর্ধেক বার করে বাকি অর্ধেক আবার ফ্রিজ়ে পুরে রাখবেন না। এতে খাবার নষ্ট হয়। কারণ যে খাবারটা তুলে রাখলেন তাপমাত্রার পরিবর্তন হওয়ায় তা পচে যেতে পারে।

ফ্রোজ়েন ফুড কেনার সময়ে লেবেলে দেখে নেবেন অ্যাডিটিভস বা প্রিজ়ারভেটিভ কিছু ব্যবহার করেছে কি না। কিছু অ্যাডিটিভসে যেমন কটু গন্ধ হয়, তেমন তা খাবারের ভিটামিন ও মিনারেল নষ্ট করে দেয়। তাই এই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

সিলড প্যাকেট খোলার আগে দেখে নিন, কয়দিনের মধ্যে তা শেষ করতে হবে। কিছু খাবার সিল খোলার ১-৫ দিনের মধ্যে, কিছু খাবার ১ সপ্তাহের মধ্যে খেয়ে নিতে হয়। কিছু খাবার আরও বেশিদিন রাখা যায়। তাই অবশ্যই লেবেল ভাল করে পড়ে তার পরে খান।

আনাজপাতি বা মাছ, মাংস… সবই রোজ তাজা কিনে খেলেই সবচেয়ে ভাল। কিন্তু সে সুযোগ না থাকলে ফ্রোজ়েন ফুডও বুঝেশুনে খেতে পারেন। তবে তা যেন অভ্যেস হয়ে না দাঁড়ায়, খেয়াল রাখুন।

হিমায়িত খাবারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে- এগুলো রান্নার ঝক্কি নেই। আবার অন্যদিকে এটাই সব থেকে বড় অসুবিধা। ‘ক্লিনিকাল নিউট্রিশন স্টাডি’র এক গবেষণার তথ্যানুসারে, যারা নিজের রান্না করেন তাদের মধ্যে একধরনের ইতিবাচক মনোভাব থাকে এবং নেতিবাচক অনুভূতি কম কাজ করে। ফলে তাদের মধ্যে দুঃশ্চিন্তায় ভোগার সম্ভাবনাও কম। তাই সুখী জীবনের জন্য নিজের রান্না নিজে করার অভ্যাস করাই ভালো।

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।