মতুয়া ভোট বড় ফ্যাক্টর

29 March 2021, 10:43:08

উত্তেজনা ও উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে ভারতের আরও চার রাজ্যের সঙ্গে নির্বাচন শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা। মোট আট ধাপের এই নির্বাচনে শনিবার নেওয়া হয়েছে প্রথম দফার ভোট।

এবারের নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর ধরা হয়েছে মতুয়া সম্প্রদায়। মতুয়াদের ভোট নিয়ে রীতিমতো টানাটানি শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচনে এবার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক্ষমতাসীন তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে।

তৃণমূলকে সরিয়ে বিজেপি এবার পরিবর্তনের সরকার গড়তে উদগ্রীব। সেই লক্ষ্যেই মতুয়াদের মন গলানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে দলটি। মতুয়াদের দলে টানতে চেষ্টার কমতি নেই তৃণমূলেরও।

অথচ এবারের নির্বাচনে সেই এই সম্প্রদায় থেকে একজন প্রার্থীও দেয়নি কোনো দলই। হিন্দুস্তান টাইমস ও ওয়ান ইন্ডিয়া।

পশ্চিমবঙ্গে সাড়ে তিন কোটি মতুয়া রয়েছেন, এদের মধ্যে ভোটার প্রায় দেড় কোটি। রাজ্য বিধানসভার ২৯৪টি আসনের মধ্যে ৩০টি আসনের ফলাফল নির্ধারিত হবে এই সম্প্রদায়ের ভোটে। আরও প্রায় ৬৩টি আসনের নির্বাচনি ফলাফল প্রভাবিত করতে পারেন মতুয়ারা।

এ কারণেই নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ সফরে এসে মতুয়া ধর্মমতের প্রবক্তা হরিচাঁদ ঠাকুরের ওড়াকান্দির বাড়ি ও মতুয়ামন্দির পরিদর্শনে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে সংস্কারবাদী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় মতুয়া সম্প্রদায়।

এই সম্প্রদায়টিতে নমঃশুদ্র, চামার এবং মালিরা অন্তভুক্ত রয়েছেন। এরা তখন অবিভক্ত বাংলায় উচ্চবর্ণের হিন্দুদের দ্বারা অস্পৃশ্য হিসাবে বিবেচিত ছিলেন।

ভারতে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) কার্যকর হওয়া নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে কিছুটা ক্ষোভ রয়েছে মতুয়াদের। তাদের আপত্তির কারণে বনগায় বিজেপির একটি জনসভাও বাতিল করতে হয়েছে। অথচ গত লোকসভা নির্বাচনে মতুয়া অধ্যুষিত এই আসনে জয় পেয়েছিল বিজেপি।

সেখানে তাদের প্রার্থী ছিলেন মতুয়া পরিবারের শান্তনু ঠাকুর। বিধায়ক তৃণমূলের মমতা ঠাকুরও মতুয়া পরিবারেরই সদস্য। তবে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে একজন মতুয়াকেও প্রার্থী করেনি প্রধান কোনো দল। বিজেপির প্রার্থী তালিকায় যেমন কোনো মতুয়া নেই, তেমনি তৃণমূল কংগ্রেসের তালিকায়ও তাদের কারও নাম আসেনি।

এ নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান সেবায়েত মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর। শাসকদলকে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ করেছেন মমতা ঠাকুরও। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আশ্বাস দিয়েছিলেন, করোনার টিকাদান শেষ হলেই মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। বিজেপির ইশতেহারেও তার উল্লেখ রয়েছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মতুয়াদের ক্ষোভ প্রশমন করে তাদের দলে টানার লক্ষ্যেই শনিবার বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দিতে মতুয়াদের পবিত্র মন্দিরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মোদি। পাশাপাশি মেয়েদের জন্য একটি স্থানীয় বিদ্যালয় উন্নীত করার এবং একটি নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

১৮১২ সালে তিনি নিকটবর্তী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তবে তিনি বেশির ভাগ জীবন অতিবাহিত করেছিলেন ওড়াকান্দিতে। ১৮৭৮ সালে ওড়াকান্দিতে তিনি মারা যান।

অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন, মতুয়ারা ভারতেরই নাগরিক। তাদের ভোটার কার্ড রয়েছে। তার তৃণমূল সরকার মতুয়াদের অধিকারের বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। নাগরিকত্ব ইস্যুতে এভাবে মতুয়াদের নিয়ে টানাটানি চলছে দুপক্ষের মধ্যে। অথচ প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে উলটো পথে হাঁটল উভয়।

রাজ্যের বিগত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মতুয়ারা তৃণমূলের একটি নির্ভরযোগ্য ভোটব্যাঙ্ক ছিল। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি বীণাপাণি দেবীর অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্ক রেখেছিলেন। ২০১৯-এর ভোটে তৃণমূলের মতুয়া ভোটব্যাঙ্কে আঘাত নেমে আসে। বর্তমানে মতুয়া মহাসঙ্ঘের এক সদস্য বড়মার নাতি শান্তনু ঠাকুর বিজেপির সাংসদ।

মতুয়ারা ইতোপূর্বে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে চিহ্নিত থাকলেও মমতা তাদের ভোটগুলোই জয়ের জন্য ব্যবহার করেছেন, কিন্তু তাদের জন্য দেওয়া নানা প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। ওদিকে আব্বাস সিদ্দিকীর গড়া নতুন রাজনৈতিক দল সেক্যুলার ফ্রন্টকে বিজেপি আর তৃণমূলের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হচ্ছে অন্য কারণে।

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।