করোনা মোকাবেলায় সর্বদলীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব ফখরুলের

9 April 2021, 9:44:40

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এটি মোকাবেলায় জনগণকে নিয়ে ‘সর্বদলীয় কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘এই চ্যালেঞ্জ জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। সর্বদলীয় কমিটি গঠন করে, জনগণকে সম্পৃক্ত করে-তাহলেই শুধুমাত্র এই সমস্যার সমাধান করা যাবে।’

শুক্রবার বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই প্রস্তাব দেন।

করোনা মহামারিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সচেতনতা বাড়ানোসহ লকডাউনে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য ভাতা ও ত্রাণের ব্যবস্থা করা, টিকা সংগ্রহের ওপর গরুত্ব দেন ফখরুল।

বলেন, ‘রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি, সকল স্তরের মানুষকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং সচেতনতা বাড়াতে হবে। আসুন আমরা জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে এই সংকট মোকাবেলার উদ্যোগ নেই। মানুষ বাঁচাই, দেশ বাঁচাই।’

বক্তব্যে মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় সরকারকে প্রতিটি ইনফরম্যাল সেক্টারের যারা উদ্যোক্তা আছেন তাদেরকে যথেষ্ট পরিমাণ প্রণোদনা দেয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, শিল্প কারখানার শ্রমিক, দোকানের কর্মীদের ভাতা দিতে হবে। যত দিন এই সমস্যা থাকবে বিশেষ করে লকডাউন থাকবে তাদেরকে ভাতা দিতে হবে। দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীলদের ত্রাণ দিতে হবে।

গত বছর সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছিল তাতে সাধারণ মানুষের খুব বেশি উপকার হয়নি অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, এতে বরঞ্চ দুর্নীতি বেশি হয়েছে।

সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিশেষজ্ঞরা বলছেন হার্ড ইম্যুনিটির জন্য সাড়ে ১২ কোটি মানুষকে টিকা দিতে হবে। এ টিকার এখন পর্যন্ত কোনো সংস্থান হয় নাই। আমরা আজকে দেখলাম, চীন ও রাশিয়া থেকে সরকার টিকা আনার কথা ভাবছে। অথচ তা এই মুহূর্তে দরকার ছিল।’

এতদিন এ উদ্যোগ না নেয়ায় সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘একবছর ব্যস্ত থাকলেন বিভিন্ন বর্ষ উদযাপনে, বিভিন্ন রকম দৈনন্দিন কাজগুলো বিশেষ করে মেগা প্রজেক্ট, ডেভেলমেন্ট প্রজেক্ট সেগুলো নিয়ে।’

করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে বেড ও আইসিইউ সংকট, পরীক্ষার অপ্রতুলতার জন্য সরকারের ‘ব্যর্থতা, উদাসীনতা, সমন্বয়হীনতা ও অব্যবস্থাপনাকে’ দায়ি করেন বিএনপি মহাসচিব।

সর্বাত্মক লকডাউন নিয়ে প্রশ্ন রেখে ফখরুল বলেন, ‘সরকার যে লকডাউন ঘোষণা করেছে সেটা ক্যারিআউট হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী বলেছেন, ১৪ তারিখ থেকে নাকি সর্বাত্মক লকডাউন করা হবে। আমরা জানি না সর্বাত্মক লকডাউনের অর্থটা কী? জনগণ জানে না এবং এর বিকল্প কী ব্যবস্থা করা হয়েছে সেটিও জনগণ জানে না।’

‘সর্বাত্মক লকডাউন করা বিশেষ করে রোজার সময়ে সেটা কিভাবে সমন্বয় করা হবে সে সম্পর্কে কোনো রোডম্যাপ দেয়া হয় নাই।’

গতবারের মতো এবারও বিএনপি নেতাকর্মীদের মানুষের পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান মহাসচিব।

তিনি আরও জানান, বিএনপিতে এখন পর্যন্ত সারাদেশে চার শতাধিক নেতা-কর্মী আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজারের অধিক। এদের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সস্ত্রীক খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও রয়েছেন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বারডেম হামপাতালে চিকিৎসাধীন বুদ্ধিজীবী লেখক বদরুদ্দীন উমর ও তার স্ত্রী সুরাইয়া হানমের রোগমুক্তি কামনা করেন তিনি।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর উদযাপনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরকালে বিক্ষোভের সময় সংঘটিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকার অসংখ্য মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

ফরিদপুরে সালথার ঘটনার পরও বিএনপির বেশিরভাগ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার নিন্দা জানান তিনি।

এসময় বিভিন্ন পুলিশ স্টেশনে মেশিনগান পাহারা বসানোর সমালোচনা করেন ফখরুল।

গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় সব রাজনৈতিক দলসহ সবাইকে কাজ করার আহবান জানান তিনি। দলের ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হলেও বিএনপির সংগ্রাম অব্যাহত আছে-যোগ করেন ফখরুল।

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।