রমজানে আত্মার পরিশুদ্ধির প্রস্তুতি নিন

15 April 2021, 3:04:04

শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। মুসলিম পরিবারগুলোর মধ্যে শুরু হয়ে গেছে রমজানের প্রস্তুতি। একদিকে করোনাভাইরাস মহামারি, অন্যদিকে প্রচণ্ড গরম, সবমিলিয়ে এবারের রমজানের প্রস্তুতি অন্যবারের চেয়ে কিছুটা হলেও আলাদা। রমজান মাসের সবচেয়ে বড় প্রস্তুতি হলো ত্যাগ স্বীকার করা ও নিজেকে সৃষ্টিকর্তার কাছে সপে দেয়া। এই মাসে রয়েছে সৃষ্টিকর্তার কাছে নিষ্পাপ হয়ে ওঠার বড় সুযোগ।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজবের চাঁদ দেখেই দোয়া পড়তেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করে দাও এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দাও।’ রাসূল (সা.) রমজানকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুত গ্রহণ করতেন এই দুই মাসে। শাবান মাস এসে গেলে রাসূলের (সা.) আমলে বিশেষ পরিবর্তন আসত। রমজান যতই ঘনিয়ে আসত তার আমলের মাত্রা ততই বেড়ে যেত। সাহাবায়ে কেরামকে (রা.) রমজানের পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিতেন। শবেবরাত অতিক্রান্ত হওয়ার পর তাদের কাজকর্মে ও আমলে রমজানের একটা আমেজ এসে যেত।

রমজান মাস মুমিনের জীবন সাজানোর শ্রেষ্ঠ সময়। মোবারক মাস রমজানে রয়েছে প্রত্যেক মুমিন বান্দার জন্য সফলতার হাতছানি। দীর্ঘ ১১ মাস পাপে ডুবে থাকলেও এ মাসে তাদের জীবনকে নিষ্কলুষ করার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। রাসূল (সা.) আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান পাওয়ার পরও তার জীবনের গোনাহগুলো ক্ষমা করাতে পারল না, সে বড়ই দুর্ভাগা!’

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত-একজন বিশ্বাসীর পরম কাঙ্ক্ষিত। একমাত্র রমজানেই তার এই প্রত্যাশার সর্বোচ্চ প্রাপ্তি সম্ভব। সম্ভাবনার এই রমজানকে হেলায়-খেলায়, গতানুগতিক ধারায় কাটিয়ে দেওয়া সুস্থ বিবেকের কাজ নয়। আর রমজানে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সংযোজন ঘটাতে হলে প্রয়োজন পূর্ব পরিকল্পনা, যা এখন থেকেই করতে হবে। আগে থেকেই প্রস্তুতি না থাকলে রমজানের ফয়েজ ও বরকত পরিপূর্ণ হাসিল করা সম্ভব নয়। রমজানের পূর্বপ্রস্তুতিকল্পে প্রথমেই প্রয়োজন সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু আত্মাকে নিষ্কলুষ করা।

রমজানের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে আত্মিক উৎকর্ষ। এই উৎকর্ষের ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য আত্মাকে ধুয়ে-মুছে পাক-সাফ করতে হবে। দীর্ঘ ১১ মাসের পাপাচারের কারণে অন্তরে যে কালিমা লেপন হয়েছে, তা দূর করতে হবে। কুপ্রবৃত্তির লাগাম টেনে ধরতে হবে। সামনের দিনগুলোতে উৎপাত যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে।

পাপাচার ত্যাগ করার মনোবৃত্তিই পাপকার্য থেকে বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে বড় সহায়ক। গোনাহও করবে, আবার রোজাও রাখবে- তা হতে পারে না। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন. ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা, অগোচরে নিন্দা তথা পাপকার্য থেকে বিরত রইল না, তার রোজা অর্থহীন উপবাস ছাড়া আর কিছুই নয়।’

রমজানের চাঁদ উদয় হলেই একদল ফেরেশতা ঘোষণায় লেগে যান। তারা বলেন, ‘হে কল্যাণের পথিক অগ্রসর হও। আর হে অমঙ্গলের হোতা, তুমি তোমার কুকর্মের রাশ টেনে ধর।’ রমজানের অঘোষিত এই আহ্বানে সাড়া দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

রমজানে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি রাখতে হবে হালাল রিজিকের প্রতি। আর এর জন্য প্রয়োজন হালাল উপার্জন। অন্তত একটি মাসে হালাল রিজিকের প্রতি যত্নবান হই। যে লোকমাটাই মুখে যাবে, তা হালাল হওয়া চাই। এমন যেন না হয় যে, রোজা তো রেখেছি আল্লাহর জন্য, কিন্তু ইফতার করছি হারাম বস্তু দ্বারা। অনেক লোক আছেন যাদের আয়ের উৎস মূলত হারাম নয়, কিন্তু যত্নবান না হওয়ার কারণে হারামের সংমিশ্রণ হয়ে যায়। তাদেরকে এর প্রতি যত্নশীল হতে হবে।

আমরা কেউই চাই না দুর্ভাগা হিসেবে নিজেকে দেখতে। তাই আসুন, আসন্ন রমজানকে সফল জীবন গঠনের ধাপ হিসেবে গ্রহণ করে গোটা মাস সঠিকভাবে চলার জন্য প্রস্তুত হই।

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।