আল-কোরআনের দৃষ্টিতে রোজা রাখার বিধান

1 May 2021, 3:39:08

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনুল করিমে ঘোষণা করেন যে, ফামান শাহিদা মিনকুমুশ শাহরা ফালইয়াছুমহু। অর্থাৎ তোমাদের মাঝে যারা এ মাসটিকে পাবে তারা যেন এ মাসের রোজা রাখে। (সুরায়ে বাকারা) ফামান শাহিদা মিনকুমুশ শাহরা ফালইয়াছুমহু। এই একটি মাত্র আয়াত দ্বারা রোজা-সম্পর্কিত বহু আহকাম ও মাছয়ালা, মাছাইলের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। শাহিদা শব্দটি শুহুদ থেকে উৎপত্তি। যার অর্থ হলো উপস্থিত ও বর্তমান। আশ শাহার অর্থ মাস। এখানে অর্থ হলো যে, তোমাদের মধ্যে থেকে যে ব্যক্তি রমজান মাসে উপস্থিত থাকবে, অর্থাৎ বর্তমান থাকবে, তার ওপর গোটা রমজান মাসের রোজা রাখা ফরজ।

পবিত্র আল কোরআনের সুরায়ে বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহর সুস্পষ্ট ঘোষণা যে, রমজান মাসই হলো সেই মাস, যাতে অবতীর্ণ করা হয়েছে মহা পবিত্র আল কোরআন, যা মানবজাতির জন্য হিদায়ত এবং সত্পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ এবং ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য নির্ণয়কারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যারা এ মাসটি পাবে, তারা যেন মাহে রমজানের রোজা পালন করে। আর যে লোক অসুস্থ অর্থাৎ (করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত) কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। (পরবর্তী সময়ে সেই রোজাগুলি পূর্ণ করবে)। মহান আল্লাহ পাক তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না। যাতে তোমরা গণনা পূরণ করো। এবং তোমাদের হিদায়ত দান করার দরুন মহান আল্লাহর মহত্ত্ব বর্ণনা করো। পবিত্র রমজান মাসের রাতের বেলা তে মহান আল্লাহ পাক তোমাদের স্ত্রীর সঙ্গে মিলনও হালাল করেছেন।

এ বিষয়ে মহান আল্লাহর ঘোষণা: রমজান মাসের রোজার রাতে তোমাদের স্ত্রীর সঙ্গে মিলন তোমাদের জন্য হালাল বা বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ অবগত রয়েছেন যে তোমরা আত্মপ্রতারণা করছিলে। সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিয়েছেন। অতঃপর তোমাদের স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হও। এবং যা কিছু তোমাদের জন্য মহান আল্লাহ দান করেছেন, তা আহরণ করো। আর পানাহার করো যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোজা পূর্ণ করো রাত পর্যন্ত। আর যতক্ষণ তোমরা ইতিকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হোয়ো না। (মাহে রমজান সম্পর্কে, অসুস্থতা তথা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে অথবা করোনা ভাইরাসের টিকা দিনের বেলা শরীরে গ্রহণ করলে অথবা দিনের বেলা ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে) এই হলো মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন কর্তৃক প্রদত্ত বেঁধে দেওয়া সীমানা। অতএব এর কাছেও যেয়ো না, মহান আল্লাহ পাক এমনিভাবে বর্ণনা করেন তার নিজের আয়াতসমূহ মানুষের জন্য। যাতে করে তারা বাঁচতে পারে। (সুরায়ে বাকারা। ১৮৭)।

মান কানা মারিযান আও আলা ছাফারিন ফা ইদদাতুম মিন আইয়ামিন উখার। এই আয়াতে রোগী ব্যক্তি কিংবা মুসাফিরদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সে রোগী ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গেলে পরবর্তী সময়ে সুস্থ হলে যতদিন অসুস্থতার কারণে রোজা রাখতে পারেনি, পরবর্তী সময়ে সুস্থ হয়ে গেলে ততদিনের কাজা রোজাগুলি আদায় করে নেবে। অনুরূপ মুসাফির ব্যক্তির বেলায়ও একই মাছয়ালা প্রয়োজন। তবে যেসব লোক অতিরিক্ত বার্ধক্যজনিত কারণে রোজা রাখতে অপারগ, কিংবা দীর্ঘকাল রোগ ভোগের কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছেন, তাদের বেলায় বুখারি শরিফ, মুসলিম শরিফ, তিরমিজি, নাছায়ি প্রমুখ হাদিসের সকল ইমামগণই ছাহাবি হজরত ছালামা ইবনুল আকওয়া (রা) এর প্রসিদ্ধ হাদিসটি বলেছেন যে, বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হলে রোজা না রাখতে পারলে, সে রোজার ফিদইয়া দেবে।

রোজার ফিদ্ইয়ার পরিমাণ হলো, মাত্র একটি রোজার ফিদইয়া অর্ধ ‘ছা’গম অথবা তার সম মূল্যঅর্থ। আমাদের দেশে অর্ধ ছা অর্থাৎ এক সের সাড়ে বারো ছটাক হয়। এই পরিমাণ গম অথবা প্রচলিত বাজারদরের মূল্য অনুযায়ী অর্থ কোনো মিসকিনকে দান করে দিলেই একটি রোজার ফিদইয়া আদায় হয়ে যাবে। তার সঙ্গে এ টুকুই বলে দেওয়া হয়েছে যে, ওয়া আন তাছুমু খাইরুল লাকুম। অর্থাৎ রোজা রাখাই হবে তোমাদের জন্য কল্যাণকর।

লেখক: অতিথি অনুবাদক, মক্কা আল মুকাররামাহ ও সাবেক খতিব, জাতীয় সংসদ জামে মসজিদ

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।