সভাপতির শূন্য পদ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বারে অচলাবস্থা

1 June 2021, 9:54:15

সভাপতির শূন্য পদ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা সাবেক সভাপতি ও বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে সভাপতি ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা তাদের এ সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ। তারা গঠনতন্ত্র মোতাবেক সভাপতি নির্বাচিত করতে চায়।

মঙ্গলবার সভাপতির কক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন তার সমর্থকদের নিয়ে অবস্থান করলে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় উভয়পক্ষ শ্লোগান পাল্টা শ্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গন। এদিকে সভাপতির পদ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে বর্তমান এমন পরিস্থিতি অতীতে কখনো সৃষ্টি হয়নি বলে মনে করছেন সাধারণ আইনজীবীরা। তারা বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করার দাবি জানান।

২০২১-২০২২ সেশনের এ নির্বাচনে ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতি পদসহ ৮টি পদে জয়ী হয় সরকার সমর্থক সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা)। অপরদিকে, সম্পাদক পদসহ বাকি ৬টি পদে জয়ী হয়েছে বিএনপি সমর্থক জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল (নীল)। সভাপতি পদে সাদা প্যানেলের প্রার্থী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু নির্বাচিত হন। সম্পাদক পদে নীল প্যানেলের ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল টানা দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন।

নির্বাচনের পর গত ১৫ মার্চ আবদুল মতিন খসরু করোনা টেস্ট করান। টেস্টে পজিটিভ আসার পর ১৬ মার্চ তিনি সিএমএইচে ভর্তি হন। ১৪ এপ্রিল আবদুল মতিন খসরু ইন্তেকাল করেন। ফলে সভাপতি পদটি শূন্য হয়ে যায়। পরে ২৭ এপ্রিল বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বানের একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস (কাজল)।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি আবদুল মতিন খসরু ১৪ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করায় সমিতির গঠনতন্ত্রের ১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সভাপতির শূন্যপদ পূরণের লক্ষ্যে করণীয় নির্ধারণ শীর্ষক বিশেষ সাধারণ সভা ৪ মে দুপুর ২টায় সমিতির শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুসারে ওইদিন বিশেষ সাধারণ সভা শুরু হলে সেখানে দুই পক্ষ হট্টগোল করে।

ওইদিন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের নাম ঘোষণা করে কার্যনির্বাহী কমিটির আওয়ামীপন্থি অংশ। তারা দাবি করেছেন সমিতির বিশেষ সাধারণ সভায় এ এম আমিন উদ্দিন কণ্ঠ ভোটে সভাপতি হয়েছেন।

অপরদিকে বিএনপি সমর্থক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদের বলেন, আহুত বিশেষ সাধারণ সভা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কোনো আলোচনা ও সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়। তিনি বলেন, সাধারণ সভা করার মতো পরিবেশ-পরিস্থিতি না থাকায় সভা মুলতবি করা হয়।

এদিকে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে চরম অচলাবস্থা দেখা দেয়। দুই পক্ষ আলাদা সংবাদ সম্মেলনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। গত ৫ মে সভাপতির শূন্যপদ পূরণ নিয়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে কার্যনির্বাহী কমিটির দুই পক্ষ। বিএনপিপন্থিরা সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে সমিতি মিলনায়তনে এবং সরকার সমর্থকরা সহ-সভাপতি মুহম্মদ শফিক উল্লাহর নেতৃত্বে সভাপতি কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ অবস্থায় সভাপতি ছাড়াই চলে সমিতির কার্যক্রম।

প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীরা জানান, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষে আসেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তাকে স্বাগত জানাতে আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করছিলেন আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা। প্রায় এক ঘণ্টা সভাপতির কক্ষে অবস্থানের পর এ এম আমিন উদ্দিন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে চলে যান। তারপরেও সভাপতির কক্ষে ও কক্ষের সামনে অবস্থান করতে থাকেন আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা। একই স্থানে ধীরে ধীরে জড়ো হতে থাকেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরাও। এক পর্যয়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ‘স্বঘোষিত সভাপতি মানি না’ বলে স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরাও পাল্টা স্লোগান দিতে শুরু করেন। টানা প্রায় এক ঘণ্টা পাল্টাপাল্টি অবস্থান ও তুমুল স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গন। এক পর্যায়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা সভাপতির কক্ষের সামনের স্থান ছেড়ে মিছিল নিয়ে বার সমিতি ভবন প্রদক্ষিণ করেন।

সভাপতির পদ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, সভাপতির পদ নিয়ে নোংরামি হচ্ছে। সমিতিকে রাজনীতিকরণ করা হচ্ছে। এ ধরনের রাজনীতি আমি চরমভাবে ঘৃণা করি। আমি সভাপতি থেকেই বারের সব উন্নয়নমূলক কাজ করেছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাকে গঠনতন্ত্র মোতাবেক সভাপতি করা হয়েছে। সভাপতি হিসেবেই আমি কক্ষে গিয়েছিলাম।

অচলাবস্থা নিয়ে সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সভাপতির পদ নিয়ে যা হচ্ছে তা দুঃখজনক। সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। এর নিরসন হওয়া দরকার।

সমিতির সাবেক কোষাধ্যক্ষ ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী বলেন, গঠনতন্ত্রের ১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সভাপতির শূন্যপদ পূরণের লক্ষ্যে করণীয় নির্ধারণ করতে বিশেষ সাধারণ সভা ডাকা হয়। কিন্ত সেখানে বিশৃংখলা সৃষ্টির কারণে সভা হয়নি। এখনও সভাপতি পদটি শূন্য রয়েছে। সূত্রঃ যুগান্তর

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।